মিতব্যয়িভা

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - ইসলাম শিক্ষা - Islamic Study - আখলাক | NCTB BOOK

মিতব্যয়িতা মানবচরিত্রের একটি প্রশংসনীয় গুণ। মিতব্যয় মানবজীবনকে সমৃদ্ধ করে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে নিরাপত্তা আনে।

মিতব্যয়িতা মানে ব্যয়ের ক্ষেত্রে সংযম ও সতর্কতা অবলম্বন করা। কিংবা 'আয় বুঝে ব্যয় করা'। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ব্যয়ের ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করাই হলো মিতব্যয়িতা। শুধু ব্যয়ের ক্ষেত্রে নয়; বরং কথাবার্তা, হাঁটা-চলায়ও ইসলামে মধ্যপন্থার নির্দেশ রয়েছে।

অপচয় ও কৃপণতা এই দুই প্রান্তিকতার মাঝখান হলো মিতব্যয়িতা। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হওয়া জরুরি। মিতব্যয়িতার মাধ্যমেই সফলতা অর্জন করা সম্ভব। তাই মানুষের জীনবযাত্রায় মিতব্যয়িতার গুরুত্ব অপরিসীম।

প্রকৃত মুমিন ব্যক্তিরা খরচের ক্ষেত্রে অপচয়ও করেন না। আবার কৃপণতাও করেন না। তাঁরা নিজ প্রয়োজন মতো খরচ করেন। যাতে অন্যের কাছে হাত পাতা না লাগে। মিতব্যয়িতা মুমিন চরিত্রের অন্যতম গুণ।

মিতব্যয়ীকে আল্লাহ তা'আলা ভালোবাসেন। সকল ধর্মে মিতব্যয়কে উৎসাহিত করা হয়েছে। কার্পণ্য ও অপব্যয়কে নিন্দা করা হয়েছে। মিতব্যয় মানুষের সম্পদ বৃদ্ধি করে এবং অন্যকে সাহায্য করার পথ উন্মুক্ত করে।

একদিকে প্রতিবছর বিশ্বে কোটি কোটি টন খাদ্য অপচয় হয়। অন্যদিকে বিশ্বে প্রতিদিন অনেক মানুষ ক্ষুধার্ত অবস্থায় দিন কাটায়। আর এই সমস্যা সমাধানে প্রয়োজন মিতব্যয়িতা। আবার আমরা যদি সব জায়গায় বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস প্রভৃতি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হই। তাহলে এসব ক্ষেত্রে অপচয় নিয়ন্ত্রণ হবে। ফলে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে।

মিতব্যয়িতার সঙ্গে সঞ্চয়ের একটি বড় সম্পর্ক রয়েছে। জাতীয় উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো সে দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বৃদ্ধি। মিতব্যয়িতার মাধ্যমে সঞ্চয় করে সম্পদ বৃদ্ধি করা যায়। সঞ্চয় যত বৃদ্ধি পাবে, দেশের অর্থনীতি তত সমৃদ্ধ হবে। পরনির্ভরশীলতা হ্রাস পাবে। দেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) মিতব্যয়িতার অভ্যাস তৈরি করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। কারণ মিতব্যয়ীকে আল্লাহ তা'আলা দারিদ্রাযুক্ত জীবন দান করবেন। রাসুলে কারিম (সা.) বলেন, 'যে ব্যক্তি পরিমিত ব্যয় করে সে নিঃস্ব হয় না'। (মুসনাদে আহমাদ)

মিতব্যয়িতার মাধ্যমে হালাল পন্থায় সঞ্চয় করে মানুষ অঢেল সম্পদের মালিক হতে পারে। ইসলাম এতে নিষেধ করে না; বরং সঞ্চিত অর্থ থাকলেই তো জনকল্যাণমূলক কাজ করা যায়। সদকায়ে জারিয়ার ধারা চালু করা যায়। আবার উদ্ধৃত অর্থ যখন নেসাব পরিমাণ হবে তখন যাকাতের মতো আরেকটি মহান ইবাদাতেরও সুযোগ মিলবে।

আমাদের প্রিয় নবি (সা.) ছিলেন মিতব্যয়িতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি তাঁর ও পরিবারের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যয় করতেন। অতিরিক্ত সম্পদ তিনি দান করে দিতেন। আমরা মুমিন-মুত্তাকিদের জীবনী থেকেও মিতব্যয়িতার শিক্ষা পাই। মিতব্যয়ী ব্যক্তিকে সুসংবাদ দিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'সুসংবাদ ঐ ব্যক্তির জন্য যাকে ইসলামের দিকে হেদায়েত করা হয়েছে, তার প্রয়োজন মাফিক জীবনোপকরণ আছে এবং সে তাতে সন্তুষ্ট রয়েছে'। (তিরমিযি)

মিতব্যয়িতা মানুষকে লোভ-লালসা, অপচয়, অপব্যয়, কৃপনতা, অলসতা ও আরামপ্রিয়তা থেকে বাঁচিয়ে রাখে। তাই আমরা সবাই জীবনের সকল ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হব। তাহলে আমাদের জীবন হবে সুন্দর, সুখী ও সমৃদ্ধশালী। 

একক কাজ/জোড়ায় কাজ
তুমি জীবনের কোন কোন ক্ষেত্রে এবং কীভাবে দানশীলতা ও মিতব্যয়িতা অবলম্বন করবে তার একটি তালিকা তৈরি কর।
(শিক্ষকের নির্দেশনা মোতাবেক তুমি একক/জোড়ায় দৈনন্দিন জীবনে দানশীলতা এবং মিতব্যয়িতার প্রয়োগক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে লিখে উপস্থাপন করো।)

 

Content added By

আরও দেখুন...

Promotion

Promotion